বহুল প্রচলিত যেসব প্রবচন শুনতে শুনতে আমরা বেড়ে উঠেছি, তার একটি হলো: Early to bed and early to rise, Makes a man healthy, wealthy and wise. তবে আক্ষেপের কথা হলো, এই ঘুম ঘুম চোখ, ঝিকিমিকি তারা সেই মাধবী রাতে, গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হওয়াকে যত সহজ মনে হোক না কেন, আধুনিক শহুরে সমাজে নানা কারণে অনেকের চোখে ঘুম আসতে চায় না।

মাঝ বয়স পেরুতে না পেরুতেই আমাদের লিখতে হয় নিদ্রাহীন রাতের কাব্য। নিয়মিত ও কার্যকরী ঘুমের অভাবে হাহাকার। উল্লেখ্য যে, কার্যকরী ঘুম বলতে আমরা কুম্ভকর্ণের ঘুম, সিঁদেল চোরের ঘুম কিংবা রাত জাগা পাখিদের ভোরবেলায় ঘুমের কথা বোঝাচ্ছি না।

বরং শরীরবৃত্তীয় প্রাকৃতিক নিয়মে গভীর ছন্দময়, পর্যাপ্ত, পুনর্জীবন এনে দেয়া ঘুমের কথা বলছি।

এ কথা আমরা সবাই জানি, ভালো ঘুম আমাদের শরীর মন সতেজ করে। এ রকম ঘুমের পর এলার্ম ক্লক ছাড়া আমরা জেগে উঠে যেন ফিরে পাই নতুন জীবন। দরকারি সব দেহরস বা হরমোন যেমন ডোপামিনে টগবগ করতে থাকে আমাদের আট কুঠুরি নয় দরজা।

অন্যদিকে ঘুমের অভাব আমাদের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ প্রত্যঙ্গ যেমন যকৃত, বৃক্ক ও মস্তিষ্কের ক্ষতি করতে পারে, যার সরাসরি প্রভাব পড়ে আমাদের দৈনন্দিন জীবন, কাজ কর্ম, সৃজনশীলতা এবং উৎপাদনশীলতার উপর।

তাই আমাদের কর্মদক্ষতা, মস্তিষ্কের কার্যকারিতা, সর্বোপরি কাজের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হিসাব নিকাশ করে ঘুমানোর বিকল্প নেই।

এখানে ঘুমের কিছু অপেক্ষাকৃত কার্যকর এবং সহজে মেনে চলা যায় এমন কিছু টিপস শেয়ার করব।
প্রথমত আপনার ঘুমানোর সময় নির্দিষ্ট করে ফেলুন।

রাত ১০ টা থেকে ১১ টার ভেতর হলে সবচেয়ে ভালো। একবার সময় ঠিক করে ফেললে মন শক্ত করে বোঝান, আপনার দিন রাত ১০টা বা ১১টাতেই শেষ। যাই ঘটুক, আপনার দিনের সব কাজ ঐ সময়ের মধ্যেই শেষ করতে হবে।

২ ঘণ্টা বেশি রাত জেগে কোনো কাজ করার চেয়ে দুই ঘণ্টা আগে ঘুম থেকে উঠে সেই কাজ আরও ভালোভাবে করা যায়।

দ্বিতীয়ত আপনার শয়ন কক্ষের দরজা জানালার পর্দা এমনভাবে বেছে নিন, যাতে ঘুমানোর আগে পুরো ঘর নিকষ কালো অন্ধকারে রূপ দেয়া যায়। আর তা সম্ভব না হলে কালো আই প্যাচ বা চোখ ঢাকা পর্দা ব্যবহার করতে পারেন। কারণ আলোর উপস্থিতি গভীর ঘুম ব্যাহত করে।

তৃতীয়ত ঘুমানোর সময় আপনার মোবাইল ফোন বিছানা থেকে দূরে রাখুন। ঘুমাতে যাবার কমপক্ষে এক ঘণ্টা আগে সবরকম ইলেক্ট্রনিক স্ক্রিন যেমন টিভি, কম্পিউটার বা মোবাইল দেখা থেকে বিরত থাকুন।

জানি, এই কাজ বেশ কঠিন। তাই ঘুমানোর আগে মাঝে মাঝে মোবাইল বা কম্পিউটার যদি দেখতেই হয়, তবে স্ক্রিনের আলো ও উজ্জ্বলতা কিছু সফটওয়ারের মাধ্যমে চোখ বান্ধব করে নিন। এরপর পারতপক্ষে ঘুমানোর স্থান শীতল রাখার চেষ্টা করুন। গরমে, মশা মাছি বা ছারপোকার জ্বালায় যে ঘুম ভালো হয় না তা বলাবাহুল্য।

পঞ্চমত ঘুমাতে যাবার আগে বই পড়াও একটি ভালো অভ্যাস। আপনার যদি ঘুম না আসে, তাহলে আপনি মজার কোনো বই পড়তে পারেন।

 

কলমকথা / সাথী